দেশে গৃহশ্রমিকরা শ্রমজীবী মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছেন না। শ্রমের স্বীকৃতি ও গৃহশ্রমিকদের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ‘গৃহশ্রমিক সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি ২০১৫’ কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের দাবি করেছে আশার আলো সোসাইটি। শনিবার (২৮ জুন) রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহযোগিতায় অক্সফাম ইন বাংলাদেশের অর্থায়নে আশার আলো সোসাইটির (এএএস) আয়োজনে ‘গৃহশ্রমিকদের অধিকার ও মানবাধিকার’ শীর্ষক রাউন্ড টেবিল আলোচনা ও মিডিয়া ক্যাম্পেইনে এ দাবি করে সংগঠনটি।
আলোচনায় বক্তারা বলেন, দেশে গৃহশ্রমিকরা শ্রমজীবী মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছেন না। শ্রম আইন ২০০৬-এর আওতায় তারা অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় তাদের অধিকারও সুরক্ষিত নয়। পেশা হিসেবে গৃহকর্মের কোনো সামাজিক মর্যাদা নেই। বক্তারা জানান, বেশিরভাগ গৃহশ্রমিক ও নিয়োগকারীই ‘গৃহশ্রমিক সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি ২০১৫’ সম্পর্কে অবগত নন। অধিকাংশ গৃহশ্রমিকের নেই কোনো নিয়োগপত্র, নির্ধারিত কর্মঘণ্টা, অসুস্থতাজনিত ছুটি কিংবা উৎসব ছুটির সুযোগ। এমনকি তাদের জন্য কোনো ন্যায্য মজুরি কাঠামোও নেই।
সভায় বক্তারা গৃহশ্রমিকদের সুরক্ষায় কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি উত্থাপন করেন। এর মধ্যে রয়েছে- গৃহশ্রমিকদের জন্য মাসিক কর্মঘণ্টা অনুযায়ী সর্বনি¤œ মজুরি নির্ধারণ এবং সময়মতো মজুরি পরিশোধ নিশ্চিত করা। সাপ্তাহিক ছুটি, উৎসব ছুটি ও অসুস্থতাজনিত ছুটি আইনগতভাবে নিশ্চিত করা। নির্যাতিত ও হয়রানির শিকার গৃহশ্রমিকদের জন্য আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করা। গৃহশ্রমিকদের সহায়তায় পৃথক হেল্পলাইন চালু করা। ‘গৃহশ্রমিক সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি ২০১৫’ কার্যকর বাস্তবায়নের জন্য তথ্য কেন্দ্র ও হেল্পডেস্ক স্থাপন।
আলোচনায় বলা হয়, সরকার ২০১৫ সালে ‘গৃহশ্রমিক সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি’ প্রণয়ন করলেও তা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় আইনগত কাঠামো এখনো তৈরি হয়নি। শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধীনে কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেল গঠন করা হলেও তা কার্যকরভাবে কাজ করছে না।
বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)-এর শোভন কাজ সংক্রান্ত কনভেনশন-১৮৯ এ স্বাক্ষর করলেও তা এখনো অনুসমর্থন করেনি। ফলে গৃহশ্রমিকরা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হলেও আইনি সহায়তা পেতে নানা জটিলতার মুখে পড়েন। আশার আলো সোসাইটির (এএএস) নির্বাহী পরিচালক জানান, তাদের সংগঠন শুধু এইচআইভি আক্রান্ত ও ঝুঁকিতে থাকা মানুষের সেবায় নয়, গৃহশ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠায়ও কাজ করছে। সভায় বক্তারা দ্রুত আইনগত কাঠামো প্রণয়ন ও কঠোর মনিটরিং ব্যবস্থা চালুর মাধ্যমে ‘গৃহশ্রমিক সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি ২০১৫’ বাস্তবায়নের আহ্বান জানান।